• ঢাকা শনিবার
    ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইউটিউব দেখে আঙুর চাষ, এ বছরই ৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৬:২৮ পিএম

ইউটিউব দেখে আঙুর চাষ, এ বছরই ৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ইউটিউব দেখে আঙুর চাষ করে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সৌখিন কৃষি উদ্যোক্তা ও পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম। জেলার সখিপুরে বাণিজ্যিকভাবে এ আঙুর চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। এক বছরে তিন লাখ টাকার আঙুর বিক্রির আশা তার।

সৌখিন এ কৃষি উদ্যোক্তা উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে কর্মরত। তার অনুপস্থিতিতে এ বাগানের দেখাশোনা করেন তার ভাতিজা রাকিব মিয়া।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, চাকরির অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ হোন তিনি। ইউটিউব দেখেই পরিকল্পনা করেন বাড়ির আঙিনায় পতিত জায়গায় আঙুর চাষ করবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বছর খানেক আগে বাড়ির পাশে এক বিঘা জমির ওপর ৬০টি আঙুরের চারা রোপণ করেন। তারপর শুরু করেন নিবিড় পরিচর্যা।

পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে চারাগুলো বড় হয়; আর জাহিদুলের স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নেয়ার পথে এগোয়। অবশেষে বছর শেষে ফলন আসতে থাকে বাগানে। এখন তো মাচায় থোকায় থোকায় আঙুর ঝুলছে। স্বপ্ন জেনো একেবারেই হাতের মুঠোয়। বর্তমানে কাঁচা-পাকা আঙুরে তার বাগানভর্তি।

তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে প্রতিদিন সকালে ৫০ থেকে ৬০ কেজি আঙুর তুলেছেন বাগান থেকে। বিক্রি করেছেন ২০০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে বাগান থেকে ২০ থেকে ২৫ কেজি আঙুর তুলে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। এ বছরই তিন লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

এদিকে, নতুন ওই বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছেন। তারাও বাগান দেখে আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

পার্শ্ববর্তী মধুপুর উপজেলা থেকে বাগান দেখতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি দারিয়াপুর গ্রামে আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করা হয়। আমিও করতে চাই এবং সেই লক্ষ্যে এখানে এসেছি। আঙুরও খেয়েছি; বেশ অনেকটাই মিষ্টি। এখানে এসে নিজের চোখে আঙুর বাগান দেখে অনেক ভালো লাগছে।’

জাহিদুল ইসলামের ভাতিজা মো. রাকিব মিয়া বলেন, ‘বাগানে পানি দেয়া থেকে শুরু করে অনেক কাজ আমি করি। এ ছাড়াও বাগানের আঙুর ও চারা আমি নিজেই বিক্রি করি। বাগানের আঙুর মাছি ও পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মাঝে মধ্যেই স্প্রে করতে হয়। বাগান দেখতে আশপাশের এলাকার অনেকেই আসছেন।’

জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো আঙুর বাগান করে বিষমুক্ত আঙুর খাওয়ার। নিজের স্বপ্নপূরণ করতে ইউটিউব ও ঝিনাইদহের রশিদ নামে এক ভাইয়ের পরামর্শে আঙুর চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আঙুরের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে; খেতেও অনেক মিষ্টি। গ্রামের অনেককেই আঙুর দেয়া হয়েছে। আঙুর বাগান আরও বড় করার ইচ্ছে আছে আমাদের।’

টাঙ্গাইল খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সখীপুরের পাহাড়ি লাল মাটিতে আঙুরসহ দেশি ও বিদেশি নানা ধরনের ফলের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে এগুলো করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। জাহিদুল ইসলামের আঙুর বাগানের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তার আঙুরের ফলন বেশ ভালো। তিনি নিয়মিত উত্তোলন করে বাজারজাত করছেন।’

তিনি আরও বলেন, আঙুর চাষিরা নিবিড়ভাবে যত্ন নিতে পারলে এটা একটা সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে আমাদের দেশে গণ্য হবে এবং বিদেশ থেকে যে পরিমাণ আঙুর আমদানি করা হয়, তা আর করতে হবে না। দেশেই সুমিষ্ট ও নিরাপদ আঙুর চাষ করা সম্ভব। জাহিদুলের মতো যারা বাগানে বা ছাদে আঙুর চাষ করতে চান তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন নজরুল ইসলাম। 

 

জেকেএস/

আর্কাইভ