
প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪ বছর পূর্তিতে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে।
‘৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতার ঐক্য, আদর্শ, ঐতিহ্য ধারণ করেছে উত্তরের অন্যতম প্রাচীণতম সংগঠন পাবনা প্রেসক্লাব। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও জড়িয়ে রয়েছে এই প্রেসক্লাবের নাম। পাবনা প্রেসক্লাবের ৯ সাংবাদিক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৩ জন সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত। সারা দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও সাংবাদিকদের একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও পাবনা প্রেসক্লাব সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই প্রতিষ্ঠান এখনও দেশের মধ্যে অখন্ড এবং ঐক্যের অন্যন্য নজির হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। আগামীতেও ঐক্য আদর্শের ধারা অটুট থাকবে।’
বৃহস্পতিবার (০১ মে) পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৬৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন সুধীজন ও সাংবাদিকরা। এদিন উৎসবে আনন্দে নেচে গেয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। সাংবাদিকতার প্রতিক হিসেবে কলম, টেলিভিশন, রেডিও, ক্যামেরা, টেলিভিশনের বুম বা মাইক্রোফোন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লোগো সহ নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাদ্য বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) প্রেসক্লাব ভবন আলোকসজ্জাকরণ সহ নানা সাজে সাজানো হয়।
শোভাযাত্রা শেষে প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর প্রেসক্লাবের প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তারপর প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতারের সভাপতিত্বে ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেলের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব সম্পাদক জহুরুল ইসলাম।
অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, পাবনা জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম আব্দুল আওয়াল, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মশিউর রহমান মণ্ডল, এনএসআই এর উপ-পরিচালক তৌফিক ইকবাল, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আফরোজা আক্তার, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুল আওয়াল মিয়া, শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাহেজ উদ্দিন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সাবেক সম্পাদক আব্দুল মতীন খান, প্রবীন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপন, সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সম্পাদক আঁখিনূর ইসলাম রেমন, উৎপল মির্জা, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিফাত রহমান সনম, সহ-সভাপতি এস এম আলাউদ্দিন, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক নেছার আহমেদ নান্নু, চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলালুর রহমান জুয়েল, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হাফিজ, সাঁথিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক মিয়া রানা, সুজানগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এ আলিম রিপন প্রমুখ।
শুভেচ্ছা পর্ব শেষে পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ যাবত পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী সভাপতি ও সম্পাদকদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন অতিথিরা। শেষে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। দুুইদিনব্যাপী আয়োজনের শেষদিন শুক্রবার (০২ মে) সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা শহরে পাবনা প্রেসক্লাবের গোড়াপত্তন ঘটে। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছরেই ৮ ও ৯ মে পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলন। যে সভা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতি। যা বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি হিসেবে পরিচিত।
পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই সেদিন সংবাদপত্রে মফস্বলে কর্মরত প্রতিনিধিদের পেশার স্বীকৃতি ঘটেছিল। এখন ঢাকার বাইরে অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। তাই অনেক প্রবীণ সাংবাদিক পাবনা প্রেসক্লাবকে মফস্বল সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে চিহিৃত করেছেন। পাবনা প্রেসক্লাবের অতীত ঐতিহ্য ও বিশাল ইতিহাস থাকলেও আজও পাবনা প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন হয়নি। পরিত্যক্ত সম্পত্তির উপর গড়ে উঠা এই ক্লাবটির শরীরে শীর্ণতা থাকলেও মর্যাদা ও আভিজত্যে এখনো অটুট।