
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম
আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংঘ নামের ওই ক্লাবঘরে এভাবেই চেয়ার কাত করে রাখা হয়েছে। ভাঙচুরের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। গত রোববার সকালে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম নীচ বাজার থেকে তোলা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম নীচ বাজার এলাকায় একটি অফিস ভাঙচুরের মিথ্যা মামলা দায়ের করে আপন দুই ভাইসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার (০৮ মে) পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-০৪ এ মামলাটি দায়ের করেন সোহেল রানা। মামলা নম্বর সিআর ২৬৯/২০২৫ (চাটমোহর)। মামলায় ১৩ জনকে নামীয় ও ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, বাদির আপন দুই ভাই মূলগ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে শামীম হোসেন রাঙ্গা, রিমাল হোসেন, রিমালের স্ত্রী আজেদা খাতুন, ছেলে মাসুম হোসেন বিপ্লব, দয়রামপুর গ্রামের মৃত হাসিনুর রহমানের ছেলে তারেক হোসেন উল্লাস, মূলগ্রামের রওশন আলীর ছেলে ছুরমান আলী, ভবানীপুর গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিন, ভেল্লাবাড়ি গ্রামের মৃত মোহায় প্রামাণিকের ছেলে আক্তার হোসেন, আক্তার হোসেনের ছেলে রমজান আলী, কাতলী গ্রামের মৃত আবু তালেবের ছেলে আলম আলী, আমোদ আলীর ছেলে নয়ন আলী, শিবপুর গ্রামের মৃত সলক প্রামানিকের ছেলে হযরত আলী ও পাঁচুরিয়া গ্রামের আলিমুদ্দিনের ছেলে আলমাছ আলী।
অভিযুক্তদের মধ্যে রাঙ্গা মূলগ্রাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি এবং হযরত আলী উপজেলা বিএনপির সাবেক স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক। আর বাকিরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক।
মামলায় বাদি সোহেল রানা অভিযোগ করেন, মূলগ্রাম নীচ বাজারে তার একটি দোকান আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংঘ নামে একটি ক্লাব ভাড়া দেন। সেখানে বিএনপির দলীয় কার্যক্রম চলতো। গত ২৫ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে জমির বায়না করার জন্য সোহেল রানা কয়েকজনের লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় অভিযুক্তরা পূর্ববিরোধের জেরে বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সোহেল রানা ও তার লোকজনকে মারধর করেন। সেইসঙ্গে ওই ক্লাবের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এতে তার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সোহেল রানা।
এ বিষয়ে সোমবার (১২ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের ব্যানার ফেস্টুন বা অফিসের কোনো কিছুই ভাঙচুর করা নেই। সব ঠিকঠাক আছে। তবে অফিসের ভেতরে থাকা চেয়ারগুলো কাত করে রাখা হয়েছে। অফিসের সামনেও কোনো ভাঙচুরের আলামত মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দা একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে অফিসে হামলা বা ভাঙচুরের সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, ওইদিন মামলার তদন্ত আসার কথা শুনে, অফিস ভাঙচুরের নাটক সাজাতে গিয়ে অফিসের চেয়ার কয়েকটি কাত করে ফেলে রেখেছেন সোহেল রানা নিজেই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বড় ভাই রাঙ্গার সাথে ছোট ভাই সোহেল রানার জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। মূলগ্রাম নীচ বাজারের একটি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন রাঙ্গা। সোহেল রানা দীর্ঘ বছর বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে তিনি হঠাৎ করে ওই মার্কেটের উত্তরের ভালো পজিশনের দুটি দোকান দাবি করেন সোহেল। আর রাঙ্গা তার জন্য দোকান দুটি দক্ষিণ দিকে রেখেছিলেন।
এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক পর্যায়ে সোহেল রানা দোকান দখল করতে কৌশলে উত্তর পাশের একটি দোকান রাতারাতি আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংঘ নামে একটি ক্লাব বানিয়ে ফেলেন। সেখানে অফিসের ভেতরে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলামের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেন। আর বাইরে স্মৃতি সংঘের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। সম্প্রতি তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মধ্যে ঝামেলা হলে গত ৮ মে বৃহস্পতিবার সোহেল রানা আদালতে মামলা করেছেন।
মামলায় ১২ নম্বর অভিযুক্ত উপজেলা বিএনপির সাবেক স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক হযরত আলী বলেন, আমাদের নামে অফিস ভাঙচুরের মিথ্যা মামলা দিয়েছে সোহেল রানা। কিন্তু তার অফিসের কোনো কিছুই ভাঙচুর করা হয়নি। এখন তদন্ত আসবে দেখে ভাঙচুর প্রমাণ দেখাতে গত রোববার সকালে নিজেই এসে অফিসের চেয়ারগুলো কাত করে ফেলে রেখে গেছে। এটাও সবাই দেখেছে। সে এতদিন বিদেশে ছিল, কোনোদিন বিএনপি করেনি। এখন বিএনপি সেজেছে। এভাবে মিথ্যা মামলায় হয়রানী করার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।
আরেক অভিযুক্ত ছুরমান আলী বলেন, তাদের ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব। গত ২৫ এপ্রিল তারিখে সবার সামনে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে সেটা সবাই দেখেছে, যার ভিডিও করা আছে। অথচ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে সোহেল। তার অফিস দেখেন কোনো কিছু হয়নি, কোনো ব্যানার, সাইনবোর্ড কিছু ছেঁড়া নেই, কোনো ভাঙচুর নেই। অথচ অফিস ভাঙচুরের মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। স্থানীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিএনপি সেজে সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা করছে সে। অথচ ওইসব নেতারাও মনে হয় সোহেলের এইসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে না।
এ বিষয়ে মামলার বাদি সোহেল রানা বলেন, আমার বড় ভাই, তার ছেলে সহ তাঁর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন মিলে আমাকে ও আমার স্ত্রী সন্তানকে গত ২৫ এপ্রিল ব্যাপক মারধর করেন। আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। থানায় গেলে পুলিশ পরদিন বসে মীমাংসা করে দেবার কথা বলেছিল। এছাড়া গ্রামের প্রধানবর্গ আপোষ মীমাংসার কথা বলেছিল। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা করে না দেওয়ায় গত ৮ মে আদালতে মামলা করেছি।
কিন্তু অফিস ভাঙচুর, ব্যানার সাইনবোর্ড ছেঁড়া ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি কেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বলেন, যেভাবে ওরা ভাঙচুর করেছে সেভাবেই এখনও আছে। কেউ অফিসে বসে না। স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে তিনি ওই অফিস করে ভাড়া দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। থানায় কেউ অভিযোগও দেয়নি। আদালতে মামলা করতে পারে। যদি আদালত আমাদের কাছে তদন্ত করতে পাঠায় তখন বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।