• ঢাকা শুক্রবার
    ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ১২:০৬ এএম

হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশে আছে নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ। যাদের ৯৭ শতাংশই বাঙালি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম লক্ষ্য—কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। তবে মাতৃভাষা থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব লিপি না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে এদের ভাষা খুব শিগগির পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ৫০টি। এদের মধ্যে প্রায় ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষা প্রচলিত আছে। উল্লেখযোগ্য ভাষাগুলো হচ্ছে চাকমা, সাঁওতাল, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা, মান্দি, ককবোরক, সাদরি, মণিপুরি (মৈতেই ও বিষ্ণুপ্রিয়া), কুডুঁখ, হাজং, কোচ, খাসি, খুমি, খিয়াং, মুণ্ডা, ম্রো, চাক, পাত্র, সৌরা, পাংখোয়া প্রভৃতি।


ভাষাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাষা বাঁচিয়ে রাখতে নৃগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা মাতৃভাষায় নিশ্চিত করতে হবে। যাদের লিখিত বর্ণলিপি নেই; সেসব ভাষার লিপি তৈরি করা প্রয়োজন। ভাষাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘরে রাখলে হবে না, সেসব ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে। যদিও সরকারি উদ্যোগে পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে নানা জটিলতায় তা ফলপ্রসূ হয়নি।
জানা গেছে, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁ প্রভৃতি অঞ্চলে দুই লক্ষাধিক সাঁওতাল বসবাস করে। বাংলাদেশে সাঁওতালি ভাষায় বাংলা ও রোমান উভয় লিপিই ব্যবহৃত হয়। লিপি সমস্যার কারণে তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই হয়নি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংগঠন পামডোর-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হৈমন্তী সরকার দেবী বলেন, আমাদের ভাষার বই সরকার দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হলো- কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে, যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০২২-৩২ সময়কালকে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিপন্ন ভাষাগুলোকে টিকিয়ে রাখা, তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের স্বাতন্ত্র্যকে সমুন্নত রাখা এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সবার সমান ভাষিক অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কতগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি পর্যায়ে একটি ভাষা কমিশন গঠন করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে ভাষাগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ কাজটি করতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে এখনো আসলে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এটিকে সক্রিয় করতে পারলে বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীদের ভাষা সমস্যার অনেকগুলোর সমাধান সম্ভব হতো।
অধ্যাপক সৌরভ সিকদার আরও বলেন, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ সব দেশেই ভাষা পরিকল্পনা আছে। বাংলাদেশে ভাষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে কয়েকটি নৃগোষ্ঠীকে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সবগুলো ভাষায় এ সুযোগ দিতে হবে। এই কাজগুলো করার প্রকৃত প্রতিষ্ঠান হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। তাদের এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। ভাষাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘরে রাখলে হবে না, সেসব ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে।

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ