• ঢাকা সোমবার
    ১৯ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাবিপ্রবি’র প্রথম জাতীয় কনফারেন্সের মাধ্যমে গবেষণার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে

প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

পাবিপ্রবি’র প্রথম জাতীয় কনফারেন্সের মাধ্যমে গবেষণার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘বিজনেস ইনোভেশন, টেকনোলজি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’ শীর্ষক কনফারেন্স। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো এ ধরনের জাতীয় আয়োজন। সেমিনারটি শুধু একাডেমিক গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, গবেষণার পরিসর এবং পাবনা শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিসরে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই আয়োজন নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন গবেষণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠত করার পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এই কনফারেন্সের আয়োজন করে। এতে পাঁচটি সেশনে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন অধ্যাপক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দীনের জীবনী তুলে ধরে তাঁর মত উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন। একইসাথে আলী বাবা ও অ্যামাজনের উদাহরণ তুলে ধরেন।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ড. নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো.শামীম আহসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নূর উন নবী ও প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য দেন।

দিনব্যাপী কনফারেন্সের প্রথম সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল একাউন্টটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি। এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর। দ্বিতীয় সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল ইকোনামিকস এন্ড ফাইন্যান্স। এতে  সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমজাদ হোসাইন। তৃতীয় সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল ম্যানেজমেন্ট ১। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম। চতুর্থ সেশন ম্যানেজমেন্ট-২ সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড এ এনএম জাহাঙ্গীর কবির । পঞ্চম সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল মার্কেটিং এন্ড ট্যুরিজম। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাবিদরা তাদের উপস্থাপিত প্রবন্ধে-বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেন। ব্যবসায়িক চিন্তাধারা এখন আর শুধু মুনাফাভিত্তিক নয়, তা আজ বিশ্বজনীন টেকসই উন্নয়নের অংশ। আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রযুক্তির প্রভাব এবং পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা মডেল- যেগুলোর সবই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। বক্তারা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ব্যবসা কেবল আর্থিক সমৃদ্ধি নয় বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল হতে হবে। 

কনফারেন্স সম্পর্কে ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলামের মন্তব্য- এই কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবিপ্রবি আবারও প্রমাণ করলো আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাঠদান ছাড়াও নতুন ধারার গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ের একটি প্রতিশ্রুতিশীল মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। এটি কেবল একদিনের কনফারেন্স নয় বরং এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, নীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই ও উদ্ভাবনী করে তুলতে সাহায্য করবে। তার মতে- আজকের দিনের ব্যবসা পরিচালনা তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন ধাপের  সমস্যা ও সম্ভাবনা আমরা জানতে পেরেছি। তরুন প্রজম্মকে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করবে এই আয়োজন। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের জ্ঞান অর্জন তথা একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের নতুন নতুন ব্যবসা ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহসী হবে। গবেষকদের গবেষণার দিগন্ত প্রসারিত করেছে, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের প্রস্তুতি দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের নতুন প্রযুক্তি ও কৌশলের ধারণা দিয়েছে ।

কনফারেন্স নিয়ে  উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ড. নজরুল ইসলামের মন্তব্য- ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আওতাভূক্ত শিক্ষকরা নতুন গবেষণার দিকনির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি আধুনিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে হালনাগাদ ধারণা পেয়ে নতুন গবেষণা করতে উৎসাহবোধ করবেন। পাঠ্যক্রম সমৃদ্ধ করতে পারবেন। এ ধরনের কনফারেন্স থেকে ব্যবসায়ীরা নতুন প্রযুক্তির ব্যবসা  শেখা, টেকসই ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ট শিক্ষকদের মতে, এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সক্ষমতা ও উদ্যোগি মানসিকতার প্রমাণ মিলেছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় নবীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভবিষ্যতে আরও বড় সভা, সেমিনার আয়োজন করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ  শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আন্তরিক। কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা করতে উৎসাহ এমনকি তাগাদা দিচ্ছেন। শিক্ষকদের মতে এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের নেটওয়ার্কিং বাড়বে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে যৌথ অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ প্রকল্প গ্রহণ সহজ হবে।

পাবনার একজন বিশিষ্ট গবেষকের মতে, জাতীয় কনফারেন্সের কারণে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামধন্য শিক্ষক-গবেষকদের আগমন ঘটেছিল। যারা দেশ-বিদেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন, গবেষণা করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন; তাদের মতো আলোকিত মানুষদের আগমনের কারণে পাবনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণ, উদ্দেশ্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সম্পর্কে  স্থানীয় মানুষ সচেতন হচ্ছে। এই ধরণের  সভা সেমিনার কনফারেন্স নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোয় স্বল্পদিনেই পাবনাবাসীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হবে। তরুন প্রজম্ম আধুনিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন হবেন। এই ধরনের উচ্চমানের একাডেমিক ইভেন্টের  ফলে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে জ্ঞান ও গবেষণামুখী চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটার পাশাপাশি দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়।

এই গবেষকের মন্তব্য থেকে বলা যায়, কনফারেন্সটি শুধু একাডেমকি গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, গবেষণার পরিসর, শিক্ষার্থীদের মননে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই আয়োজন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে আরেকধাপ এগিয়ে নিয়েছে।

কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম আব্দুল-আওয়াল জানান- আগামী জুনে আরও একটি জাতীয় কনফারেন্স আয়োজন করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গবেষকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটি সেল তৈরির কাজ চলমান। উপাচার্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে  বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন।  

শিক্ষার্থীদের মতে-উপাচার্যের দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব গুন ও একাডেমিক অগ্রগতির প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ দেখেছি এই কনফারেন্সে। পাশাপাশি উপাচার্যের একাডেমিক উৎকর্ষের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ মিলেছে। তাঁর দিক নিদের্শনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদিনেই গৌরবময় অবস্থানে পৌছাবে। উপাচার্যের দৃঢ় নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা, আধুনিক চিন্তাধারা ও শিক্ষাবান্ধব মনোভাবের কারণে  পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান ও গবেষণার তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে উঠবে ।

লেখকঃ-
মোঃ ফারুক হোসেন চৌধুরী
অতিরিক্ত পরিচালক
জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর্কাইভ