• ঢাকা মঙ্গলবার
    ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুলজা গণহত্যাসহ উইঘুর নির্যাতনের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩, ০৩:২৬ এএম

গুলজা গণহত্যাসহ উইঘুর নির্যাতনের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গুলজা গণহত্যার ২৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘উইঘুর মুসলিমদের মুক্তি আর কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্টের আহ্বায়ক মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিবেচনার মারপ্যাঁচে উইঘুর মুসলিমদের ইতিহাস সংগ্রাম, নির্যাতন, নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। ফিলিস্তিনি, মুর, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে মানুষ জানলেও চীনাদের রক্ষণশীল, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবস্থার কারণে উইঘুরদের বাস্তব পরিস্থিতি ও গুলজা ট্রাজেডি সম্পর্কিত তথ্য সাধারণ পর্যায়ে এখনও স্পষ্টভাবে পৌঁছায়নি।

১৯৯৭ সালের জানুয়ারির শেষ সময় থেকে শুরু করে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের গুলজা শহরে স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের উপর চীন সরকারের দমন-নিপীড়নের সেই দুঃসহ ঘটনা গুলজা গণহত্যা নামে পরিচিত। ওই সময় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি ১ হাজার ৬০০ মুসলিমকে সরকারি হিসেবেই গ্রেফতার করা হয়। নিরস্ত্র জনতার উপর এমন আগ্রাসনের ফলে অনেকই চীন থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তানে গেলে সেখানেও রেহাই হয়নি। তৎকালীন আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিহাসের ঘৃণিত ও কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে নতুন ঠিকানা হয়।

এমনকি চৈনিক বাহিনী মার্কিনিদের সহায়তায় সেখানে গিয়েও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চালায়। ওইসব বন্দীদের নিজ ধর্ম বিরোধী শিক্ষা দেয়া হয়, মান্দারিন ভাষা শিখতে বাধ্য করা হয়, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানসহ নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।

উইঘুরদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন শুধু কোনো ধর্মীয় বা মুসলিম ধর্মীয় ইস্যু নয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত জনপদ ফিলিস্তিন প্রশ্নে সবাই যেমন একাট্টা, ঠিক তেমনই পদক্ষেপের মাধ্যমে উইঘুরদের বিরুদ্ধে সব ধরনের আগ্রাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। এই ইস্যুতে আর কোনো ভৌগলিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় চালবাজি বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ আর দেখতে চায় না, বলেন তিনি।

আতাউর রহমান বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বরাতে বিবিসি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় জিনজিয়াংয়ে মোট উইঘুর মুসলিম ১ কোটি ২০ লাখ। জিনজিয়াংয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত বন্দী শিবিরে বন্দী আছে আনুমানিক ১০ লাখ মুসলমান। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। চীনা সরকার মিডিয়ার সব কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ দেশের মুক্তিকামী জনতা তাদের সহযোগিতা পায়নি। মিয়ানমারের সরকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বন্ধে চীনের পরোক্ষ যোগসাজশ রয়েছে।

চীনা সরকার মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে তারা এসব অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। চীন সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্ররা চীনের ওপর নামমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীন সরকার এ সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষান্ত হয়নি, হবেও না। বিশ্বের সব দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস করিয়ে চীনের ওপর ব্যাপক আরোপ করে চাপ তৈরি করতে হবে। অন্যথায় চীনা সরকার কোনোভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না।


আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর কাসেমি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শহিদুল্লাহ আনসারী, ইসলামী মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান, ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাহমুদুল হাসান, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়েদ আসআদ মাদানীর খলিফা মাওলানা আহসান হাবীব পীরে মাদানী, শাইখ মুফতি জুবায়ের গণী, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের সভাপতি মুফতি ওসমান গনি চৌধুরী, মাওলানা ইমরান ফয়সাল যুক্তিবাদী, মাওলানা আশরাফ আল হারুন প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ