
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২১, ০৬:২৬ পিএম
রমনা
পার্ককে বলা হয়ে থাকে
ঢাকার ফুসফুস। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততম যান্ত্রিক কোলাহল থেকে একটু প্রশান্তির
জন্য নগরবাসীর গন্তব্য - চিরসবুজ এই উদ্যানটি। ঢাকার
দূষিত বাতাসের বিপরীতে সতেজ বাতাসের বিশাল
এক ভাণ্ডার এই পার্ক।
প্রতিনিয়ত
সবুজ হারানো ঢাকায়, সবুজ আর প্রকৃতির
ছোঁয়া পেতে প্রতিদিনই মানুষ
আসে রমনা পার্কে। কিন্তু
করোনাকাল বিবেচনায় সকাল ৬টা থেকে
৯টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টা খোলা
রাখা হচ্ছে পার্কটি। এ কারণে অনেকেই
পার্কে এসে গেট বন্ধ
থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রায়
৬৮ দশমিক ৫ একর আয়তনের
এই রমনা পার্ক অন্য
স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে
দিনভর খোলা থাকত। সে
সময় প্রকৃতিপ্রেমী, দর্শনার্থী, সাধারণ পথচারীদের আনাগোনায় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকত পার্কটি। কিন্তু
করোনাকালে পার্কটির গেটগুলোতে তালা দিয়ে রাখা
হয়েছে। সেই সঙ্গে ফটকগুলোতে
লাগানো রয়েছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি।
বিজ্ঞপ্তিতে
উল্লেখ বলা হয়েছে, করোনা
মহামারিতে আপাতত সকাল ৬টা থেকে
৯টা পর্যন্ত রমনা পার্ক খোলা
থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পার্ক ত্যাগ করতে হবে আগতদের।
মাস্ক ব্যতীত কেউ পার্কে প্রবেশ
করতে পারবেন না। করতে
হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা।
এ বিজ্ঞপ্তি দেখে অনেকের মধ্যেই
ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
আমজাদ
হোসেন নামে এক ব্যক্তি
পার্কে এসে দেখেন গেট
বন্ধ। সেই সঙ্গে গেটে
সকাল ৬টা থেকে ৯টা
পর্যন্ত খোলা রাখার বিজ্ঞপ্তি
দেখতে পান। তিনি বলেন,
অনেক পথচারী এ পথে হেটে
যাওয়ার সময় একদিকের গেট
দিয়ে ঢুকে অন্য গেট
দিয়ে বের হন। মাঝখানের
সময় পার্কের ভেতরে বেঞ্চে বসে কিছুটা জিরিয়ে
নেন। এছাড়া বিভিন্ন
পেশার মানুষ আসে এখানে। কিন্তু
বর্তমানে পার্কটি মাত্র ৩ ঘণ্টার জন্য
খোলা রাখা হয়। আমরা
আজ এসে দেখলাম পার্কটি
বন্ধ, ফিরে যেতে হচ্ছে।
যেহেতু প্রচুর মানুষ পার্কটিতে আসে তাই এটা
খুলে দেয়া উচিত।
পার্কে
আসা আরেক ব্যক্তি রিংকু
রহমান বলেন, ঢাকা শহরে এমনিতেই
সবুজের সংকট। যে কয়েকটি জায়গায়
সবুজের সমারোহ আছে এর মধ্যে
রমনা পার্ক একটি। প্রকৃতিপ্রেমীরা এখন পার্কে ঘুরতে
এলেও বন্ধ দেখে ফিরে
যায়। ৩ ঘণ্টা খোলা
রাখায় শুধু আশেপাশের মানুষ
এখানে এসে ব্যায়াম বা
প্রাতঃভ্রমণ করতে পারেন। করোনাকালে
অন্য সব কিছু খুলে
দেয়া হয়েছে। অথচ রমনা পার্ক
মাত্র ৩ ঘণ্টা খোলা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন বিবেচনা করে
পার্কটি পুরোপুরি খুলে দেয়ার ব্যবস্থা
করে দেয়।
এ
বিষয়ে পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য
রহুল আমিন বলেন, সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমরা পার্কটি শুধু
সকাল ৬টা থেকে ৯টা
পর্যন্ত পার্কটি খোলা রাখি। এ
সময় যারা আসেন, তারা
সবাই পার্কে প্রবেশ করে সময় কাটাতে
পারেন। কিন্তু এ নির্দিষ্ট সময়ের
পর আমরা পার্কের সব
গেট বন্ধ করে দিই।
এরপর আর কাউকে ঢুকতে
দেয়া হয় না। দ্বিতীয়বার
লকডাউনের পর থেকেই এ
নিয়ম পালন করা হচ্ছে।
তিনি
বলেন, পার্কের ভেতরে উন্নয়ন কাজ চলমান। শুধু
শ্রমিকরা সারাদিন এর ভেতরে এসে
কাজ করেন। অন্য কোন মানুষকে
এ সময় প্রবেশ করতে
দেয়া হয় না। নির্দিষ্ট
সময় ছাড়া সব গেট
তালাবদ্ধ রাখা হয়।
জানা
গেছে, প্রায় ৪৮ কোটি টাকা
ব্যয়ে রমনা পার্কের অবকাঠামো
উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের
কাজ চলছে। এ প্রকল্পের অংশ
হিসেবেই লেকের পার ঘেঁষে সিরামিক
ইটের রাস্তা তৈরি ও কাঠের
বেঞ্চ নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি
লেক খনন, শিশু কর্নার
আধুনিকায়ন, উদ্যানের চারপাশে এবং ভেতরে লাইট
স্থাপন, টয়লেটের মান উন্নয়ন, দর্শনার্থীদের
বসার জন্য বেঞ্চগুলো নতুন
করার কাজ চলমান রয়েছে।
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ মোকাবিলায় গত বছরের ২৬
মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি
ঘোষণার পর রমনা পার্ক
বন্ধ করে দেয়া হয়।
৩১ মে সাধারণ ছুটি
তুলে নেয়া হলেও পার্কটি
বন্ধই থাকে। একই বছরের ২৭
সেপ্টেম্বর পার্কটি খুলে দেয়া হয়।
এরপর গত ৫ এপ্রিল
দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ ঘোষণার
পর থেকে সকাল ৬টা
থেকে ৯ টা পর্যন্ত
৩ ঘণ্টার জন্য পার্কটি খুলে
রাখা হচ্ছে।
এমআর/নির্জন