• ঢাকা শনিবার
    ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ, সতর্ক পুলিশ

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৩, ০৫:৩৮ পিএম

আজ ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ, সতর্ক পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি সমাবেশ করবে আজ (বুধবার, ১২ জুলাই)। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ২৩ শর্তে এ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে, পাশাপাশি স্থানে প্রধান বড় দুই দলের এ সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীবাসীর মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সমাবেশ থেকে বিরোধী দল অরাজকতা করতে পারে - এ আশঙ্কা থেকে বাড়তি সতর্কতায় থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি সমাবেশ করবে নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। এ সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের ‘এক দফা’ ঘোষণা করবে দলটি। পাশাপাশি নিজেদের শক্তির জানান দিতেও প্রস্তুত তারা। সবমিলে ১০ লাখ লোকের জমায়াত দেখাতে চায় ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় এ দলটি। তাদের আশা, মানুষ তাদের ‘ভোটাধিকার’ ফিরে পেতে এ সমাবেশে যোগ দেবে।

শুধু তাই নয়, ঢাকায় সফররত বিদেশি কূটনীতিকদের বিএনপি এ জনসমাগমের মাধ্যমে দেখাতে চায়, সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মানুষের সমর্থন রয়েছে। এজন্য ঢাকা মহানগরসহ এর আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এ সমাবেশে যোগ দিনে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে বিএনপি। বহু বছর পর সমাবেশের জন্য ঢাকায় মাইকে প্রচার চালানোর সুযোগও পেয়েছে দলটি। ফলে, সমাবেশে রাজধানীবাসীকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পাড়া-মহল্লায় মাইকিংও করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারাও বিএনপির এক দফার প্রেক্ষাপটে শান্তি সমাবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। জনগণ যে আওয়ামী লীগের সাথে আছে, সমাবেশের উপস্থিতির মধ্যদিয়ে সেটি দেখাতে চায় দলটি।

আজকের সমাবেশে ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেবেন। প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। সবমিলে এক লাখ লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।

এদিকে, আজকের দুই সমাবেশ ঘিরে চাপা উত্তাপ বিরাজ করছে রাজধানীবাসীর মনে। যদিও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বা তাদের ওপর চড়াও না হওয়ার নির্দেশনা আছে। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে নিজেরাও সংঘাতে না জড়ান, সেই বার্তাও দেয়া হয়েছে। তবুও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন, হতে পারে সংঘর্ষ। তাই খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আজকে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, কাকরাইল এলাকা এড়িয়ে চলতে চাইছেন সবাই।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, বিএনপিকে ২৩ শর্তে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য আছে, তারা অরাজকতা করতে পারে। ফলে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি কোনো অরাজকতার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

কর্মসূচি পালনে দুই দলকে মানতে হবে ডিএমপির যে ২৩ শর্ত

(১) এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়; স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

(২) স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

(৩) অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

(৪) নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।

(৫) স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

(৬) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৭) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(৮) শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

(৯) অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।

(১০) অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।

(১১) আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

(১২) ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে - এমন কোনও বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন/বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

(১৩) সমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

(১৪) সমাবেশ শুরুর ২ (দুই) ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।

(১৫) অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

(১৬) কোনও অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

(১৭) আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় - এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।

(১৮) রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কার্যকলাপ ও বক্তব্য দেয়া যাবে না।

(১৯) উসকানিমূলক কোনও বক্তব্য দেয়া বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

(২০) কোনও ধরণের লাঠি-সোটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।

(২১) আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোনও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।

(২২) উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।

(২৩) জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই এ অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ