• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেসির যাদুতে বিশ্বকাপে টিকে রইলো আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ১০:১৯ এএম

মেসির যাদুতে বিশ্বকাপে টিকে রইলো আর্জেন্টিনা

ক্রীড়া ডেস্ক

একবিংশ শতাব্দিতে আর্জেন্টিনা মানেই লিওনেল মেসি। আরও একবার আর্জেন্টিনার ত্রাতা রূপে নিজের জানান দিলেন ফুটবলের এই যাদুকর। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা আর্জেন্টিনাকে পথ দেখালেন এলএম টেন। তার পায়ের যাদুতে মেক্সিকোকে হারিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট অর্জন করে শেষ ষোলোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল করল আর্জেন্টিনা।

লুসাইল স্টেডিয়ামে শনিবার (২৬ নভেম্বর) বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে গোলশূন্যভাবে শেষ হওয়া খেলায় দ্বিতীয়ার্ধে প্রাণ এনে দেন মেসি। ৬৪ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান মেসি। এরপর ৮৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এনজো ফার্নান্দেজ।

মেক্সিকোর বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচের প্রথমার্ধে সুবিধা করে উঠতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর হাই প্রেসিং ফুটবলের সামনে ব্যর্থ হচ্ছিল আর্জেন্টাইন মিডফিল্ড। বল পজেশনে এগিয়ে থাকলেও মেক্সিকোর রক্ষণভাগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ব্যর্থ হয় মেসি-মারিয়ারা। মেক্সিকোর হাই প্রেসিং ফুটবলের সামনে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড সুবিধা করে উঠতে পারছিল না। বরং মেক্সিকোই এগিয়ে ছিল আক্রমণে।

ম্যাচের ১৯ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় লোজানোকে ফেলে দেন ওটামেন্ডি। রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। ফ্রিকিক থেকে গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজের ভালো পরীক্ষা নেয় মেক্সিকো। ২১ মিনিটে আকুনাকে বিপজ্জনকভাবে বাধা দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন মেক্সিকোর নেস্তর আরাউহো। 

২৭ মিনিটে ডি বক্সে দারুণ একটা ক্রস বাড়ান আকুনা, কিন্তু মেসির হেড চলে যায় গোলপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। অবশ্য তার আগেই রেফারি বাজান ফাউলের বাঁশি। ক্রস নেয়ার আগে মেক্সিকান মার্কারের পা মাড়িয়ে দিয়েছিলেন আকুনা।

৩২ মিনিটে ডি পলকে ফেলে দিলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। কর্নারের কাছাকাছি দুরূহ কোণ থেকে মেসির নেয়া ফ্রিকিক রুখে দেন মেক্সিকান গোলরক্ষক ওচোয়া।

৪০ মিনিটে কর্নার থেকে ডি পল বল দেন ডি মারিয়াকে। ডি মারিয়ার ক্রসে হেড নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লাউতারো মার্টিনেজ। তার হেড চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে।

 ৪৩ মিনিটে ফের বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় মেক্সিকো। দুরূহ কোণ থেকে নেয়া কর্নার দুর্দান্তভাবে ঠেকান এমি মার্টিনেজ। এদিন প্রথমার্ধে বল দখলে পিছিয়ে থাকা মেক্সিকোই অপেক্ষাকৃত ভালো সুযোগ তৈরি করে। তাদের নেওয়া তিনটি শটের একটি ছিল লক্ষ্যে।

যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় আলবিসেলেস্তেরা। গোটা প্রথমার্ধে মেক্সিকোর গোলে মাত্র একটি শট নিতে পারে আর্জেন্টিনা, সেটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের ৪৯ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের ঠিক বাইরে মেসিকে ফেলে দেয় মেক্সিকোর ডিফেন্ডাররা। বিপজ্জনক জায়গা থেকে মেসির ফ্রি কিক গোলবার উঁচিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে। ৫৫ মিনিটে মেক্সিকোর ডি বক্সে ঐক্যবদ্ধ আক্রমণ শানায় আর্জেন্টিনা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় তারা। 

৫৭ মিনিটে গুইডো রদ্রিগেজকে তুলে এনজো ফার্নান্দেজকে নামান কোচ স্ক্যালোনি। ফার্নান্দেজ নামার পর আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড গতি খুঁজে পায়। মাঠে নেমেই খেলার গতিপথ বদলে দেন তিনি। মেক্সিকোর প্রেসিং রুখে দিতে কাউন্টার প্রেসিং করতে থাকে আর্জেন্টিনা।

মেক্সিকোর রক্ষণভাগে ক্রমাগত চাপ তৈরি করতে থাকেন মেসি-ফার্নান্দেজরা। তবে অ্যাাটকিং থার্ডে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনার সব চেষ্টা। ৬২ মিনিটে জোড়া খেলোয়াড় বদল করেন স্ক্যালোনি। লাউতারো মার্টিনেজ ও মন্তিয়েলকে তুলে আলভারেজ ও মলিনাকে নামান।

প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ লিওনেল মেসি জ্বলে উঠেন দ্বিতীয়ার্ধে। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকেন মেক্সিকোর গোলমুখে। ৬৪ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মেক্সিকান ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে দূরপাল্লার শটে পরাস্ত করলেন মেক্সিকান গোলরক্ষক ওচোয়াকে। ডি মারিয়ার পাস  থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে লাইফলাইন দেন বিশ্বকাপে। এই গোলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। বিশ্বকাপে দুজনের গোল সংখ্যাই সমান ৮টি করে।

৮৬ মিনিটে ফের গোল পায় আর্জেন্টিনা। এবারের গোলদাতা বদলি হিসেবে নামা এনজো ফার্নান্দেজ। প্রিমেরা লিগার দল বেনফিকার এই ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বিশ্বকাপে এটিই তার প্রথম গোল। 

এই জয়ে উজ্জ্বল হলো আর্জেন্টিনার শেষ ষোলোর সম্ভাবনা। শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারাতে পারলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউট পর্বে জায়গা করে নেবে লিওনেল মেসির দল। তবে ড্র করলেও থাকবে সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে তাকিয়ে থাকতে হবে সৌদি আরব-মেক্সিকো ম্যাচের ফলের দিকে। 


এআরআই

আর্কাইভ