• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৬ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যে মেয়ের সুখের জন্য জমি বিক্রি করলাম, সেই মেয়েকেই হারালাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

যে মেয়ের সুখের জন্য জমি বিক্রি করলাম, সেই মেয়েকেই হারালাম

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে এক গৃহবধূকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূর নাম উর্মি আক্তার (২৯)। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার যশোদলের মধ্যনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে স্বামী জিল্লুর রহমানসহ পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। নিহত উর্মি আক্তার জেলার হাওর উপজেলার অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের কানঠাকুর দিঘিরপাড় এলাকার মো. সিজিল মিয়ার মেয়ে। অন্যদিকে অভিযুক্ত স্বামী জিল্লুর রহমান সদর উপজেলার যশোদলের মধ্যনগর এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে।

নিহত গৃহবধূ উর্মির বড় ভাই সাহেব মিয়া জানান, ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে আমার ছোট বোন উর্মির বিয়ে হয় জেলার সদর উপজেলার যশোদল মধ্যনগর এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমানের সাথে। বিয়ের ২ বছর পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় ইভা নামে এক কন্যা সন্তান। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য আমার বোন উর্মিকে নির্যাতন করতো স্বামী জিল্লুর ও তার পরিবারের লোকজন। নির্যাতনের কথা উর্মি আমাদের জানালে দেড় বছর আগে স্বামীর ব্যবসার জন্য জমি বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এরপর উর্মির ওপর নির্যাতন কিছুদিন বন্ধ ছিল। অপরদিকে জিল্লুর রহমান জুয়া খেলে ও নেশা করে সেই ৪ লাখ টাকা নষ্ট করে ফেলে। কিছুদিন আগে আবার টাকা আনার জন্য উর্মিকে চাপ দেয় জিল্লুর। তখন আমার বোন উর্মি টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে আবারও তাকে জিল্লুর ও তার পরিবারের লোকজন নির্যাতন করে। সেই কথাও আমাদেকে জানায় সে। এরই একপর্যায়ে মঙ্গলবার কোনও এক সময় উর্মিকে হত্যা করে নিজ বসত ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আমাদের জানায় উর্মি আত্মহত্যা করেছে। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উর্মির স্বামী জিল্লুর রহমান, তার বাবা মতিউর রহমান, মা সাহেরা খাতুন ও ছোট ভাই আফজল এবং চাচতো ভাই তামিম বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে দেখতে পাই।

তিনি আরও জানান, আমাদের ধারণা মূলত টাকার জন্যই স্বামী জিল্লুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে উর্মিকে হত্যা করে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। আমার বোন আত্মহত্যা করলে জিল্লুর ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেল কেন? আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে জিল্লুর ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। আর সেই দৃশ্য হয়তো আমার ৫ বছর বয়সী ভাগনি ইভা দেখে ফেলেছে। তাই তাকে সাথে নিয়ে পালিয়েছে তারা। আমার বোন হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।

মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার সামনে অবস্থান করছিলেন উর্মির বাবা মো. সিজিল মিয়া। মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাওর থেকে জেলা সদরে এসেছেন তিনি। মেয়ের শোকে বার বার মুর্চা যাচ্ছিলেন সিজিল মিয়া। এসময় আহাজারি করে তিনি বলেন, যে মেয়ের সুখের জন্য জমি বিক্রি করলাম সেই মেয়েকেই হারালাম। মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর্কাইভ