• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৪ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

এক হাজার টাকার জন্য শামীমের এসএসসি দেয়া হলো না

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম

এক হাজার টাকার জন্য শামীমের এসএসসি দেয়া হলো না

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুর প্রতিনিধি

চলছে এসএসসি পরীক্ষা। সব পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারলেও মাত্র ফরম ফিলাপের বকেয়া এক হাজার টাকা পরীক্ষার আগে পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রবেশপত্র না দেয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শামীম মিয়া।

শামীম মিয়া (১৫) শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের জুলগাঁও গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে। সে উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলো।

শামীম ও তার স্বজনের অভিযোগ, ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক শামীমের কাছে ফরম ফিলাপের বকেয়া এক হাজার টাকা দাবি করে প্রবেশপত্র‍ দেননি। এতে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তার। স্কুলের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের জন্য তিন হাজার টাকা করে নেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। আর সবাই ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র‍ নেয়। আর শামীম দুই হাজার টাকা দেয় এবং বলে পরীক্ষা চলাকালে বাকি এক হাজার টাকা দেবে। কিন্তু  ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, বকেয়া টাকা নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকতে।

এরপর পরীক্ষার দিন শামীম পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও প্রধান শিক্ষককে পায়নি শামীম। একপযার্য়ে সবাই পরীক্ষা দিতে শুরু করলেও শামীম তখন প্রধান শিক্ষককে পেতে কয়েকটি কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করে অবশেষে শিক্ষকের দেখা পান। তার কাছে প্রবেশপত্র‍ চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন সন্ধ্যায় প্রবেশপত্র‍ নিতে। আর এদিকে প্রবেশপত্র‍ হাতে না থাকায় পরীক্ষায় বসতেই পারেনি শামীম।

পরীক্ষার্থী শামীম মিয়া জানান, ফরম ফিলাপের জন্য স্যাররা তিন হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার বাবা না থাকায় এক হাজার টাকা সে সময় কম দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার কম নিতে রাজি হননি। তাই টাকা পরে দিতে চাই। এরপর প্রবেশপত্র নিতে গেলে প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, টাকা আনসস, পরে বলল তুই পরীক্ষা দিবার যাইস; তখন প্রবেশপত্র দিমুনি।

শামিম বলে, পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি কোনো স্যার আসে নাই। পরে সওদাগর ভাইরে নিয়ে কয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে স্যারকে পেলাম। তখন স্যার বললেন রাতে নিস। আমি বললাম রাতে নিয়া কী করমু। পরে স্যার কিছু না বলে চলে গেলেন। আমার পরীক্ষা দিবার খুব ইচ্ছে ছিল। স্যারের জন্য আমার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। আমি এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলাম।

শামীমের মা শিরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়ি থেকে পোলাডারে পড়াইতাছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছেন। আমার পোলাডা এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেল।

এসব বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে বারবার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন,‘ শামীম নামের ছেলেটার ফরম ফিলাপ বা অ্যাডমিট না পাওয়ার বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টা জানলে আমার পরিষদ বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম।’

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, আমাকে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানোর পরে তাদের উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। আর একটি অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ