• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০১ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
সুন্দরগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশ

শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের দাবি

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম

শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের দাবি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বর্তমান শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে শহিদ মিনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখা এ আয়োজন করে।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান।

উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আমিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম সরকার মঞ্জু, সেক্রেটারি আতাউর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজু, পৌর জামায়াতের আমির একরামুল হক।

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপজেলা সেক্রেটারি হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক সামিউল ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজা, উপজেলা পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি এসএম সাজ্জাদ হোসাইন আমুশ, সাবেক কাউন্সিলর নুর আলম সরকার প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, ‘শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার, নৈতিকতা ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হলে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় শ্রমিককে কেবল একটি উৎপাদন যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য, বিশ্রামের সুযোগ, কর্মপরিবেশ ও মানবিক প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়। এই অন্যায্য ব্যবস্থার অবসানে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গঠিত ইসলামী শ্রমনীতি-ই হতে পারে একমাত্র মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক বিকল্প। যেখানে মালিক ও শ্রমিক উভয়ের মাঝে দায়িত্ব ও অধিকারের ভারসাম্য রক্ষা হয়।’

তারা আরও বলেন, ‘প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামী রাষ্ট্রে শ্রমিকদের যে সম্মান, ন্যায্য মজুরি এবং মানবিক আচরণ নিশ্চিত করেছিলেন, তা আজও সমকালীন বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি বলেন, “ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করো।” শুধু কথার মধ্যে নয়, বাস্তবতাতেও তিনি শ্রমিককে মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। এমনকি তিনি নিজে হাত দিয়ে কাজ করেছেন, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন।’

বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান তথাকথিত আধুনিক সমাজে শ্রমিকেরা নানা রকম শোষণ, বঞ্চনা ও অবমাননার শিকার। মালিকপক্ষের অবহেলা, দীর্ঘ সময় কাজ করেও কম মজুরি, নিরাপত্তাহীন কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও বিশ্রামের সুযোগের অভাব—এসব কিছুই শ্রমজীবী মানুষের জীবনে গভীর হতাশা ও বঞ্চনার সৃষ্টি করছে। অথচ ইসলামী শ্রমনীতিতে শ্রমিকের শুধু পারিশ্রমিকই নয়, তার আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা, এমনকি তার পরিবার-পরিজনের কল্যাণের কথাও বলা হয়েছে।’

তারা জোর দিয়ে বলেন, ‘আজকের এই বৈষম্যপূর্ণ ও শোষণভিত্তিক ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রয়োজন ইসলামী আদর্শভিত্তিক শ্রমনীতি, যা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্য মুক্তির পথ। এ নীতিমালার বাস্তবায়ন হলে সমাজে শ্রমিক-মালিকের মাঝে বিরোধ নয়, বরং পারস্পরিক সম্মান, দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে।’

সমাবেশ শেষে এক বিশাল র‍্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে উপজেলার পনের ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা থেকে আগত প্রায় দুই হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন।

আর্কাইভ