• ঢাকা শনিবার
    ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমা আমদানি না হলে হল বন্ধ, হুমকি প্রদর্শক সমিতির

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ১১:২৫ পিএম

সিনেমা আমদানি না হলে হল বন্ধ, হুমকি প্রদর্শক সমিতির

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি

বিনোদন ডেস্ক

ভারতীয় সিনেমা দেখিয়ে হলের হাল ফেরাতে চাইছিলেন দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা; সে বিষয়ে এখনও সরকারের পদক্ষেপ না দেখে সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
শনিবার ঢাকায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই হুমকি দেওয়া হয়।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “এমতাবস্থায় সিনেমা হল চালু রাখার আর কোনো বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না বিধায় বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি।”
সিনেমা হলগুলোর মালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সিনেমা দেখানোর তদ্বির করে আসছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও সম্প্রতি বলেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সম্মত হলে সরকারের আপত্তি নেই।
এরপর সুদীপ্ত দাস ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির ঘোষণা দেন। তবে এখনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সায় পায়নি।


সংবাদ সম্মেলনে সুদীপ্ত দাস বলেন, “এর আগে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিদের সচিবালয় ডেকে বলেছিলেন, ‘পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অনাপত্তি থাকলে সরকার বছরে অন্তত ১০টি উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেবে।
“চিত্রনায়ক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ’র ব্যানারে প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ বছরে ১০টি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে লিখিত প্রস্তাবনা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সকল বাধা অপসারিত হওয়ার পরও আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ‘না’ সূচক মনোভাবের পরিচায়ক।”
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান নেতৃত্ব শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা আমদানিতে রাজি হলেও আপত্তি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। হিন্দি সিনেমা আমদানির প্রবল বিরোধিতায় নেমেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুও।
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, লায়নস প্রেক্ষাগৃহের মালিক মির্জা আব্দুল খালেক দাবি করেন, ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমা টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে সিনেমা আমদানির বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “চার বছর আগেও সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ২৪০। এখন নিয়মিত চালু হলের সংখ্যা মাত্র ৪০। হল যদি না চলে, হল যদি বন্ধ হয়ে যাবে দেশের সিনেমা চালাবে কোথায়?
“ঈদে বড় ছবি আসছে, ভালো ছবি আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, একটা ছবিও পুঁজি তুলে আনতে পারবে না। কারণ, পুঁজি তুলে আনার মতো জায়গা নাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি, ২০ লাখ টাকা দিয়ে সিনেমা বানালেও সেই টাকা তুলে আনার মতো জায়গা নাই।”
প্রেক্ষাগৃহের উন্নয়নে ঋণ দিতে সরকারের হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন প্রসঙ্গে খালেক বলেন, “আমরা লোন নিয়ে সিনেমা হল বানাব। নিজের সম্পত্তি বন্ধক রেখে লোন নিতে হবে। সিনেমা যদি না চলে, আমার হলও যাবে, নিজের সম্পত্তিও যাবে। এখন যে সব ছবি মুক্তি পাচ্ছে, এসব ছবি দিয়ে কোনোদিনই হলের টাকা উঠবে না।”
তিনি বলেন, “একটা-দুইটা ছবি যদি দেশে ভালো ব্যবসা করে, অনেক মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে হল নির্মাণে। হল বাড়লে ব্যবসা বাড়বে। তখন ব্যাংকও টাকা দিবে। তা না হলে এই ঋণের টাকা কেউ নেবে না, ব্যাংকও ঋণ দেবে না।”
বিদেশি সিনেমা এলে দেশের অনেক শিল্পী কলাকুশলী বেকার হয়ে পড়বেন বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে- তা মেনে নিয়েই খালেক পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, “এখন কি সিনেমার শিল্পী, কলাকুশলীরা ভালো আছেন?”
তিনি পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে বলেন, “এক সময় পাকিস্তানে সিনেমা বলতে কিছু ছিল না। হিন্দি সিনেমা ব্যবসা করেছে বলে তাদের কয়েকশ সিনেপ্লেক্স হয়েছে। ব্যবসা বেড়েছে। আজ তাদের নিজস্ব সিনেমা শত কোটি রুপি ব্যবসা করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক মো: খুরশিদ আলম, সংস্কৃতি সমাজ কল্যাণ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস রুবেলও্ উপস্থিত ছিলেন।
সরকার দাবি মেনে না নিলে কবে নাগাদ হল বন্ধ করা হবে- প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, আগামী ঈদের আগেই অর্থাৎ এপ্রিল মাসের মধ্যে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ