• ঢাকা রবিবার
    ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা: ড. ইউনূস

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসেন। ঠিক করেন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনও লাভ নেই।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বক্তব্যের আগে প্রধান উপদেষ্টাসহ সনদে স্বাক্ষর করেন বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।

May be an image of dais and text

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ যেন মনে রাখে এই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে। পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো। কারও এসে আমাদের সোজা করতে হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে না, ধাক্কাধাক্কি করতে হবে না।

সনদে স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকের দিনটি বিশেষ। আজ সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একত্রিত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এরকম ঘটনা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন মনে হয়েছিল হয়তো দুই-একটি বিষয়ে একমত করতে পারবো। তাই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি যদি বুঝিয়ে কিছু করতে পারেন। অবাক হয়ে দেখলাম, সব রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হলো। সবাই আলোচনা করলেন। এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না।

May be an image of one or more people, dais and text

ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে কোনও আইন-কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলবো যে মানুষ ঈর্ষার চোখে দেখবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু মানুষদের নিয়ে সমাজ গঠন করতে হবে।  

জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই কমিশন ও সনদ করার সুযোগ যারা দিয়েছে আজ তাদের স্মরণ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা মনে রাখতে হবে। যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়ে বেঁচে আছেন তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ।

‘জুলাই জাতীয় সনদ দিয়ে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হলো ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের কারণে। আমরা পুরনো কথা পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো জাতীয় জীবনে, সংবিধান পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্যে, সরকার চালানোর মধ্যে নিয়ে এলাম। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো।’ -বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

May be an image of blimp, crowd and text

অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে তরুণদের সম্ভাবনা, সমুদ্র বন্দরের উপযুক্ত ব্যবহারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অংশ। একটি নিয়মের মধ্যে চললে এই সম্পদের ব্যবহার করতে পারবো। যদি গভীর সমুদ্র বন্দর করে দেই তাহলে দুনিয়ার অনেক জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়তে পারবে। আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুরে আটকে থাকবে না। এটি একটি বিরাট সুযোগ।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, অন্য দেশের জেলেরা এসে বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে যায়। আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী মিলিয়ে যদি একযোগে বন্দর উন্নত করি, তাহলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। সকল দেশের মানুষ এখানে আসবে। আমরা নেপাল, ভূটান ও সেভেন-সিস্টার্সের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবো এসব বন্দরের কারণে।

এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সেই স্বপ্ন, প্রত্যাশার স্মারক যতটুকু অর্জিত হয়েছে- জুলাই জাতীয় সনদ সেটির প্রথম পদক্ষেপ।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই অগ্রসরমানতায় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে। প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো মত ও পথের পার্থক্য থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আর্কাইভ