প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায় প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জুলাই শহীদেরা ন্যায়বিচার পেয়েছে, রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পেয়েছে, প্রসিকিউশন পক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই মামলার দুইজন আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একজন আসামি তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে নিজেকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা মনে করি শহীদদের প্রতি, দেশের প্রতি, এদেশের মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি, সংবিধানের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা পরিশোধের স্বার্থে এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়। এই রায় প্রশান্তি আনবে। এ রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। এ রায় বাংলাদেশের ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের রায় ঘোষণার পর এক ব্রিফিং এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, “যে অভিযোগগুলোতে সাজা হয়েছে, আপনারা শুনেছেন দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ওনার পাঁচটা অভিযোগের তিনটা কাউন্টে এনে আদালত সাজা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে একটা কাউন্টে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটিতে যাবজ্জীবন জেল আন্টিল ন্যাচারাল ডেথ দিয়েছেন। আর ডাইরেক্টলি যেটা নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে তাকে ডেথ পেনাল্টি দিয়েছেন।”
যেদিন থেকে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা রাষ্ট্র আইনিভাবে যা যা করণীয় সব করবে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে। রাষ্ট্র আইনিভাবে যা যা করা সম্ভব সবটুকু করবেন।’
তিনি জানান, এই মামলায় শহীদদের পরিবার, আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটা নির্দেশনা আদালত দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে মামলা বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই আদালত বলেছেন এই মামলার মধ্যে আওমী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যু ছিল না বলে ওই বিষয়ে ওনারা কোনো কমেন্ট করেননি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এ ধরনের মুভমেন্টের ক্ষেত্রে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “ওই বিষয়ে কোন পর্যবেক্ষণ এখানে আসার সুযোগ নেই, যেহেতু কোন অভিযোগ এ মর্মে কোন চার্জ গঠন হয়নি বা সাবজেক্ট না, ইস্যু না। তবে এই মামলার মর্ম থেকে সবাই একটা বার্তা পাবেন কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
রায় বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রায় বাস্তবায়ন আইনি পথেই হবে, আইনসংগতভাবেই হবে, বেআইনি বা আইনসংগত নয় এরকম কোনো পথ সরকার অবলম্বন করবে না।”
পলাতক থাকা অবস্থায় আপিল করার সুযোগ বাংলাদেশে না বিশ্বের কোনো দেশে আছে বলে জানা নেই বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শেখ হাসিনা ভারতে বসে গণমাধ্যমে কথা বলছেন এবং তিনি যেহেতু আইনের দৃষ্টিতে এখন একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আইনসংগতভাবে যতরকম পদক্ষেপ আছে সবগুলো নেবে বলে আমরা মনে করি।”
রায়ের কপি পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকারের হাতে রায়ের কপি যাওয়ার পর সরকার এই রায় কার্যকর করার জন্য কোথায় রায়ের কপি পাঠাবে, কী পদক্ষেপ নেবে সরকার— একটা আইনি পর্যালোচনা করে সেটা নেবে।”