• ঢাকা শনিবার
    ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

‘আমি নিশ্চিত তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়া হবে’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম

‘আমি নিশ্চিত তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়া হবে’

ছবি: সংগৃহীত

ক্রীড়া ডেস্ক

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলার জন্য নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল এখন বাংলাদেশে। ফলে দেশের ক্রিকেট পাড়ায় চলছে ভীষণ ব্যস্ততা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পেন্ডুলাম ঝুলছে এখন তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবকে ঘিরে। ভারতের বিপক্ষে বাজিমাত করা তানজিম সাকিব ফেসবুক পোস্টের জেরে এখন নেটিজেনদের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। এরই মধ্যে তরুণ এই ক্রিকেটারকে নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন হুয়ামূন কবির নীরব ওরফে আরজে নিরব। তিনি জানিয়েছেন, তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেন আরজে নিরব। সেখানে তানজিম সাকিবের কিছু পোস্ট পড়ে শোনান তিনি এবং তানজিম সাকিবের মতামতকে একান্তই ব্যক্তিগত হিসেবে মনে করেন নিরব। ভিডিওর ক্যাপশনে নিরব লিখেছেন, ‘সাকিব কে আসলে? যার একটা কথায় দেশে হৈচৈ পড়ে গেলো? কবে উনি এতো বড়ো দায়িত্বশীল পদে যোগ দিলেন! জানলাম না, নাকি কাহিনী অন্য কিছু?’

নারীর চাকরি করা নিয়ে তানজিম সাকিব যে পোস্ট করেছিলেন, সেটির সঙ্গে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করে নিরব বলেন, ‘সমস্যাটা কোথায় বলুন তো? দুটো প্রেক্ষাপট চিন্তা করেন। প্রথমটা, উনি কারও নামে গিবত করেননি, কারও নামে বদনাম করেননি। দ্বিতীয়টি, উনি নিজের ধর্ম প্রচার করার চেষ্টা করেছেন, যেটি বিশ্বাস করেন সেটি বলার চেষ্টা করেছেন। অপরাধটা কোথায়? সেটি নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন?’

প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার আরজে নীরব - Times Now BD

কথা প্রসঙ্গ নিরব বলেন, এর আগে দেখলাম, কোনো একজন খেলোয়াড় সে তার বাবাকে দিয়ে পূজা করছে এবং তারপরে সে ৯ উইকেট পেয়েছে। তারপরে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। এখানে তো অসুবিধার কিছু দেখছি না। কোনো অসুবিধা হয়নি তো দেশে। অন্য ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করছে, তাহলে (সাকিবের ক্ষেত্রে) অসুবিধা কোথায়? সে (তানজিম সাকিব) তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছে, এই তো কথা! আমার মনে হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়ে একমত যে, স্ত্রীরা কাজ (চাকরি) করলে এই এই অসুবিধা হয়। সেই অধিকাংশ মানুষদের একজন তানজিম। 

নারীদের চাকরি করার বিষয়ে তানজিম সাকিবের পোস্ট নিয়ে আরজে নিরব বলেন, আপনি যদি এখন পোলে ছেড়ে দেন (তানজিম সাকিবের ফেসবুক পোস্ট) তাহলে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ তার সঙ্গে একমত পোষণ করবে। কিন্তু তারপরে চাকরি এখন করতে অনেকে বাধ্য। কারণ একার চাকরির টাকায় এখন সংসার চলে না। প্রায় ১০-১২ বছর হয়ে গেছে যে, এখন আর একার টাকায় সংসার চলে না। তাতে অনেকে চাকরি করতে বাধ্য হয়। এখন যুক্তি হলো যে, আমার মা চাকরি করে, আমার ওয়াইফ কাজ করে। আমাদের পরিবারে অনেক মেয়ে কাজ করে। আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি না, আমি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। আমি মনে করি, এখন নারীদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অনেক জরুরি।

তানজিম সাকিবের বিষয়ে আরজে ও উপস্থাপক নিরব বলেন, ‘উনি জাতীয় দলের খেলোয়াড়। এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হলে যদি তার ব্যক্তিগত মতামত দেয়ার অধিকার না থাকে কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী, তাহলে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তাহলে তাদের ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থাকার কথা নয়, কারণ সেটি ব্যক্তিগত। আমার মনে হয়, এখানে অনেক বড় একটা চক্রান্ত আছে ভাই।’

চক্রান্তের কথা উল্ল্যেখ করে উপস্থাপক নিরব তার ভিডিওতে বলেন,  মোস্তাফিজ যখন হেভি হিট, সেই সময়ে মোস্তাফিজকে এমন একটি কোচিংয়ে পাঠানো হলো। এরপরে মোস্তাফিজ এসে আর মোস্তাফিজ নাই। মোস্তাফিজের বলে কোনো ধার নেই, আউট হয় না। কিচ্ছু নেই, বলে ছয় মারে। মোস্তাফিজকে শেষ করে দেয়া হলো। আশরাফুল যখন তুঙ্গে খেলায়, সে সময় তাকে এমন একটা ফাঁদে ফেলানো হলো যে, ফাঁদ থেকে তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেল। বাংলাদেশের ক্রিকেটটা ধ্বংস হয়ে গেল। এই ছেলেগুলো যখনই উঠে আসতে চায় তখন আমাদের বড় ভাইয়েরা, বড় দাদারা এমন এমন কিছু করে যাতে পরবর্তীতে সে আর কিছু না করতে পারে। আমি নিশ্চিত তানজিমকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়া হবে। খুব নিশ্চিত। তাতে অনেকের লাভ। ফলে প্রতিবাদ করে লাভ নেই। ধর্মীয় অনুভূতি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা, সেটিই থাকা উচিত। এখন কে সামাজিম মাধ্যমে কী লিখল, তা দিয়ে একটি জাতির নীতি-নির্ধারণ নিশ্চয়ই হবে না। আজকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যদি একটি ইসলামি দলও যদি বসে তাতেও নীতি-নির্ধারণ হুট করে বদল করা সম্ভব না বা হবে না, হওয়া উচিতও না। 

প্রসঙ্গত, তানজিম সাকিবের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে থাকা ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের একটি লেখা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে পোস্টে লেখা ছিল, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। স্ত্রীকে যেই স্বামী বলে- আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই। আমি যা পাই তোমাকে খাওয়াব, সে তাকে রাজরানি করে রাখবেন। এখন সে রাজরানি না হয়ে কর্মচারী হতে চায়।’ এছাড়াও সেখানে আরও কিছু লেখা ছিল। সেগুলো নিয়ে নেটিজেনরা এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত। অনেকে তরুণ এই ক্রিকেটারকে দল থেকে বাদ দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। 

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ