• ঢাকা বুধবার
    ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা হাতে শুধু বাঁ পা নিয়ে তামান্না এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২, ০৫:৩৭ পিএম

বিনা হাতে শুধু বাঁ পা নিয়ে তামান্না এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জন্ম থেকেই দুই হাত ও ডান পা নেই তামান্নার। এভাবেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর স্নাতক সম্মানের জন্য ভর্তি হলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি)।

আজ বুধবার যবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তামান্না আক্তার নুরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পীর মেয়ে তামান্না নুরা। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত ও এক পা নেই। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাঁর সাফল্যের পথে কখনো বাধা হতে পারেনি। বাঁ পা লিখেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। এরপর তামান্না যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। যবিপ্রবির গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে তামান্নাকে মাইক্রোবায়োলজিতে পড়ার সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে তামান্না আক্তার নুরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্য স্যার আমাকে বলেন, মাইক্রোবায়োলজিতে পড়তে হলে পুরোটাই প্র্যাকটিক্যাল করতে হয়। যা তোমার পক্ষে সম্ভব না। তাই তিনি আমাকে ইংরেজিতে পড়ার বিষয়ে চিন্তা করতে বলেন। স্যারের পরামর্শে আমি আজ (বুধবার) ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হয়েছি।’

তামান্নার বাবা রওশন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তামান্নাকে ইংরেজিতে ভর্তি করেছি। তামান্না এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি।’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তামান্না আক্তার নুরা মাইক্রোবায়োলজিতে পড়তে চেয়েছিল। মেধা তালিকায় তাঁর নাম না এলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি তাঁকে মাইক্রোবায়োলজিতে পড়ার সুযোগ দেয়। কিন্তু মাইক্রোবায়োলজিতে পড়তে প্র্যাকটিক্যাল করতে হয়। সেখানে কারও সাহায্য নেওয়া যায় না। কারণ প্র্যাকটিক্যাল নিজে না করলে, সে কিছু বুঝবে না। এ জন্য আমি তাঁকে ইংরেজিতে পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলি। তা ছাড়া ইংরেজিতে পড়লে, সে যেহেতু মেধাবী, ভালো ফলাফল করলে তাঁকে আমরা এখানে ভালো একটা চাকরি দিতে পারব।’

উল্লেখ্য, অদম্য মেধাবী তামান্নার এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষার সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন তাঁরা। তাঁর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয়। 

আর্কাইভ