• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাপপ্রবাহে ঝরছে আমের গুটি, লোকসানের আশঙ্কায় চাষিরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৩, ০১:৩৫ এএম

তাপপ্রবাহে ঝরছে আমের গুটি, লোকসানের আশঙ্কায় চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আমের মুকুল থেকে গুটি হতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। আমের মুকুল আসার এই সময়ে রাজশাহীতে পাঁচদিনের মতো বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে চলতি বছর আমের অনেক বেশি ফলন আশা করেছিলেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরবর্তীতে টানা কয়েকদিনের মৃদু তাপপ্রবাহে আমের গুটি ঝরতে থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তাপপ্রবাহের আগে রাজশাহীতে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই গুটি ঝরার আশঙ্কা একটু কম। যেটুকু ঝরছে সেটা স্বাভাবিক বলেই ধরা হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ আম চাষিদের গাছ ও গুটির পরিচর্যায় পরামর্শ দিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজশাহীতে আমের চাষাবাদ বেড়েছে। এবার রাজশাহীতে আমের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। ২০২২ সালে আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৮টি গাছ নিয়ে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিয়ানে আম বাগান রয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেনের। তিনি বলেন, এ বছর আমের মুকুল দেরিতে এসেছে। ছয়টি ছাড়া সব গাছেই ৮০ শতাংশের বেশি আমের গুটি রয়েছে। তবে, বাগানের দক্ষিণের গাছগুলোর গুটি ঝরেছে। কারণ দক্ষিণের দিকে সূর্যের তাপ ১৬ আনা লাগে। আর উত্তরের গাছগুলোতে সূর্যের তাপ কিছুটা লাগলেও ছায়া থাকে বেশি।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষি কর্মকতার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিচ্ছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি। এছাড়া গুটির ঝরে পড়া রোধে আমের গাছের গোড়া খুঁড়ে পানি দিচ্ছি। দেখা যাক কতটুকু কাজে লাগে। তবে বৃষ্টির সঙ্গে আবহাওয়াগত একটা ব্যাপার থাকে। বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

এ বছর তিনটি বাগানের ৪৫টি গাছ কিনে আমের চাষ করছেন স্থানীয় আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, মার্চ মাসে বেশ কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এই বৃষ্টি মুকুলের জন্য ভিটামিনের মতো কাজ করেছে। সেই বৃষ্টিতে মুকুলের গায়ে লেগে থাকা মরা ও শুকনা ফুলগুলো ঝরে যায়। একই সঙ্গে আমের পাতা ও মুকুলগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যায়। ফলে মুকুল বা গুটিতে এ সময়ে যে বিষ ও পানি স্প্রে করতে হয় সেটি করার প্রয়োজন হয়নি।

তিনি বলেন, এ বছর প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছিল। আমের গুটিও ভালো আছে। তবে বৃষ্টি না থাকার পাশাপাশি তাপমাত্রা বাড়ায় আমের গুটি ঝরা শুরু হয়েছে। এখন যে গুটি ঝরছে সেটা বন্ধ না করা গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে আমের বোটার আঠা আরও শুকিয়ে যাবে। এতে করে আরও বেশি আমের গুটি ঝরে যাবে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, কয়েকদিন থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়ছে। আজ রবিবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটিই। গতকাল শনিবার ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, খরা হলে আমের গুটি ঝরবে এটাই স্বাভাবিক। আমের গুটি ঝরা রোধে আমরা গাছের গোড়ায় পানি দিতে পারি। তাহলে গুটি ঝরা অনেকটাই কমে যাবে। তবে বর্তমানে গাছে প্রচুর আমের গুটি রয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এখান থেকে আরও গুটি ঝরে যাবে। সব গুটি টিকলে আমের গাছ নিতে পারবে না। তবে আমের গুটি ঝরা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। মৌসুমের প্রথমে হওয়া বৃষ্টিতে আমের অনেক উপকার হয়েছে। এখনও রাজশাহীতে ওইভাবে তাপমাত্রা বাড়েনি। আমের গুটি যেটুকু ঝরছে সেটা স্বাভাবিক। কৃষক বা চাষিদের হতাশার কিছু নেই। বেশি গুটি ঝরছে মনে হলে সেচ দিতে হবে। এছাড়া আম চাষিদের গুটি ঝরা রোধে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


এডিএস/

আর্কাইভ