• ঢাকা শনিবার
    ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

আলামিন ব্যবসা শুরু করেছিলেন লকডাউনে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম

আলামিন ব্যবসা শুরু করেছিলেন লকডাউনে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ২০২০ সালে শুরু হয়।গোটা দেশ লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়ে।কর্ম হারিয়ে অনেকে পথে বসে যান। তবে এমন পরিস্থিতিতেও নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন যশোরের ঝিকরগাছার উদ্যোক্তা আল-আমিন (২০)।

তিনি ফুলের রাজধানী খ্যাত ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর নিকটস্থ শিমুলিয়া আন্দোলপোতা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমানের ছেলে।

যখন দেশে করোনা মহামারী হানা দেয় তখন বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঘরে বসে অবসর সময় কাটাতে থাকেন আল-আমিন। তবে করোনার সময় কাজ তো দূরের কথা ঘর থেকে বের হওয়াই ছিল কষ্টসাধ্য। এমন সময় আল-আমিনের মাথায় আসে অনলাইনে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সারাদেশে ফুল বিক্রির পরিকল্পনা। এমন ভাবনা সামনে রেখে পা বাড়ান আল-আমিন। আজ তিনি একজন সফল অনলাইন ফুল ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা। শুধু যশোর নয় সারাদেশের ৬৪ জেলাতেই তার সরবরাহ করা ফুলের গুণগতমানের প্রশংসা ও পরিচয়ও রয়েছে।

উদ্যোক্তা আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৯ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে কলেজে ভর্তি হই। ২০২০ সালের শুরুতে দেশে করোনা হানা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠন, শুরু হয় লকডাউন। ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমার মামারা সবাই ফুলের চাষ করেন। আমাদের এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুল প্রেমী মানুষেরা গদখালীর ফুলের বাগান পরিদর্শনে আসেন। সারাদেশের মানুষেরা এক নামে চেনে যশোরের গদখালী ফুল বাজার। প্রতিদিন ভোরবেলায় গদখালীতে ফুলের বাজার শুরু হয়। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এ বাজারে টাটকা ফুল কিনতে আসেন।

আল-আমিন আরও বলেন, লকডাউনে মানুষ ঘর থেকে বাইরে যেতে পারত না। ওই সময় কোনো কাজ বা চাকরি করাও মানুষের জন্য ছিল দুষ্কর। আমিও এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের হাল ধরার জন্য কোনো আয়ের উৎস বা কাজ পাচ্ছিলাম না। ছোটবেলা থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী ছিলাম। স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করার। আমি বাড়িতে বসেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে ফুলের ব্যবসা করতে পারি কিনা তা নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা শুরু করি, শুরুতে ব্যবসা নিয়ে সবার নেগেটিভ কথা শুনে অনেক ভীতি এবং আশঙ্কার মধ্যে ছিলাম। কীভাবে শুরু করব বা কীভাবে দেশের ৬৪ জেলার মানুষের কাছে ফুল পৌঁছে দেওয়া যায়। পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কেও কোনো ধারণা ছিল না আমার। অনেক মানুষের থেকে পরামর্শ নিয়েছি। সবাই বলেছে ফুল কাঁচা পোডাক্ট এটা অনলাইনে সারাদেশব্যাপী সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ফুল মানুষের কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। আর মানুষের ফুল লাগলে নিকটস্থ ফুলের দোকানে যায় অনলাইনে কেউ ফুল খোঁজে না। আরও নানান কথা। তারপরেও মনোবল হারাইনি। আমার পরিবার বলেছিল শুরু করতে, আমিও দৃঢ় মনোবল নিয়ে শুরু করি। ফেসবুকে ফুল বাজার ডটকম নামের একটি পেজ এবং ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলি। ১০০ টাকার মেগাবাইট এবং ৫০০ টাকার ফুল দিয়েই ব্যবসা শুরু করি। দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে অনলাইনে সারাদেশব্যাপী আমার জেলার ঐতিহ্য গদখালীর ফুলের ব্যবসা দাঁড় করাতে পেরেছি।

আল-আমিন বলেন, আমি প্রতিদিন গোলাপ ফুল, গাঁদা, ফুল, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, বেলী, জিপসি, রথিষ্টিক ও লিলিয়াম ফুল সংগ্রহ করি। বর্তমানে আমার ফুল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলাতে সরবরাহ করছি। ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা পঁচে যাচ্ছে এমন কোন অভিযোগ আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। প্রতিনিয়তই অর্ডার আসে, কখনো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার আবার কখনো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, এ বছরের শুরুতে তিন দিবসকে ঘিরে এক দিনেই ৫০ হাজার টাকার ফুলের অর্ডার পেয়েছিলাম ঢাকা, গাজীপুর থেকে এবং সফলভাবে ডেলিভারি দিতে পেরেছিলাম। বিশেষ করে ঢাকা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, ফরিদপুর, দিনাজপুর থেকে প্রতিনিয়তই ফুলের অর্ডার আসে। ফুলের ব্যবসা থেকে এখন আমার মাসিক আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিন বছরে প্রায় তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। সংসার সামলিয়ে, নিজের পড়াশোনা সামলিয়ে আমি এখন অনেক ভালো আছি। আমার ভালো থাকার পেছনে সবটুকু অবদান আমার ক্রেতাদের। তারাও আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেন।

আল-আমিনের ফুলের একজন ক্রেতা ঢাকার সাতরাস্তার হাসিবুল ইসলাম বলেন, আল-আমিনের থেকে ফুল নিয়ে থাকি। কখনো কোনো ফুল নষ্ট পাইনি। ফুল পাঠবার আগে সে আমাদের ছবি দেয়, আমরা ফুল হাতে পাই হুবহু ছবিতে যেমন দেখি তেমনি। প্রত্যেক বিক্রেতার উচিত ক্রেতার বিশ্বস্ততা অর্জন করে সৎভাবে ব্যবসা করার। তাহলে সফলতা নিশ্চিত।

বাংলাদেশ ফলোয়ার সোসাইটির সভাপতি ও গদখালীর ফুলচাষী নেতা আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল-আমিনকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। সে প্রতিদিন সকালে গদখালির বাজারে এসে ফুল নিয়ে ছোটাছুটি করে। আমাদের কাছেও খুব ভালো লাগে যে আমাদের যশোর জেলার ঐতিহ্য ফুলের রাজধানী গদখালীর ফুল সে অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রি করছে।


তিনি আরও বলেন, করোনার সময় ফুলের বাজারে ধস নামে। এ সময় থেকেই সে বিপুল পরিমাণ ফুল অনলাইনে বিক্রি করা শুরু করে এবং নিজেও লাভবান হচ্ছে। আল-আমিনের দেখাদেখি অনেকেই অনলাইনে ফুলের ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখছে।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান সর্দর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল-আমিনকে আমি চিনি। ছেলেটা ফুলের ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালায় এবং সংসারের খরচও সে চালায়। আমরা চাই ঘরে ঘরে এমন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। আমি তার সফলতা কামনা করি।


এডিএস/

আর্কাইভ