• ঢাকা শনিবার
    ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পিছনে বাবার লাশ, সামনে জমি-জমার সালিশে ৫ সন্তান

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১, ০৩:৪১ এএম

পিছনে বাবার লাশ, সামনে জমি-জমার সালিশে ৫ সন্তান

দেশজুড়ে ডেস্ক

পাঁচ সন্তানের জনক ইয়াছিন মোল্লা (৮৫)। ছোট ছেলে রহমান মোল্লার সঙ্গে থাকতেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এই বৃদ্ধ। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ইয়াছিন মোল্লার ছোট ছেলে। তবে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

মৃত ইয়াছিন মোল্লাকে দাফন করার জন্য পৈতৃক ভিটায় আনা হয়। কিন্তু এতেও যে বাঁধা। নিজ পাঁচ সন্তানের বাঁধার মুখে লাশ দাফন হয়নি। মৃত্যুর ২২ ঘণ্টা পরে সালিশের মাধ্যমে লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। তবে এতেও বাঁধা। পরে লাশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

নিধারুণ কষ্টের এ ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচুরিয়ার অম্বলপুর গ্রামে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় মৃত্যু হলেও বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই পড়ে থাকে ইয়াছিন মোল্লার লাশ। আর তার সন্তানদের এমন কীর্তিতে হতবাক স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানায়, বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু, রাবেয়া, মমতাজ ও রহমান মোল্লার বাবা ইয়াছিন মোল্লা। দীর্ঘদিন ধরেই ছোট পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে রহমান মোল্লার সঙ্গে বাকি চারজনের বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জেরেই বাবার লাশ দাফন না করে জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তাই তো লাশ দাফনও করা যায়নি।

লাশ দাফন না হওয়ার খবরে ছুটে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম। মৃত্যুর ২২ ঘণ্টা পর চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করা হয়। তবে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ লাশটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠায়।

ইয়াছিন মোল্লার সন্তান বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু, রাবেয়া ও মমতাজ অভিযোগ করে বলেন, ছোট ভাই রহমান মোল্লার কাছে বাবা থাকতেন। দীর্ঘ দিন ধরে থাকার সুযোগে বাবাকে ফুঁসলিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন ছোট ভাই রহমান। এ নিয়ে রাজবাড়ী কোর্টে আমরা মামলাও করি।

তারা আরও বলেন, সেই মামলায় ৫ জুলাই কোর্ট বাবাকে হাজির হতে নির্দেশ দিলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। বাবাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললেও সে (ছোট ভাই) আমাদের কথা না শুনে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। আমাদের ধারণা, রহমান ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে মেরে ফেলেছে।

ইয়াছিন মোল্লার ছোট ছেলে রহমান মোল্লা বলেন, গত শুক্রবার হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হলে তাকে গোয়ালন্দে প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাই। এ সময় ডাক্তার কিছু টেস্ট ও ওষুধ লিখে দিয়ে বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে বলেন। আমি ডাক্তারের কথা অনুযায়ী বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বাবা আরও বেশি অসুস্থ হলে গোয়ালন্দ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।

দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি তাদের বাড়িতে যাই এবং সালিশের মাধ্যমে লকডাউনের পরে সমাধানের কথা বলে স্ট্যাম্পে তাদের উভয়পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে ইয়াছিন মোল্লার দাফনের সিদ্ধান্ত নেই।'

গোয়ালন্দঘাট থানার এসআই মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করি এবং জিডি মূলে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

মামুন



আর্কাইভ