• ঢাকা শুক্রবার
    ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিলা ভিক্টোরিয়া কলেজের গাছ কেটে সাবাড়

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ১১:১৭ এএম

কুমিলা ভিক্টোরিয়া কলেজের গাছ কেটে সাবাড়

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রাণীবিদ্যা ভবন ও ছেলেদের আবাসিক হল কাজী নজরুল হলসহ কলেজ চত্বরের বেশ কয়েকটি স্থানে প্রায় ছয়টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খানের ছত্রছায়ায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো.শাহজাহান এক সপ্তাহের মাথায় কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই গাছগুলো কেটে ফেলছেন।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগ শিক্ষক ও কলেজের সাবেক শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, ‍‍`আমি এ বিষয় কিছু জানি না। আমি এ নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে ইচ্ছুক নই। আপনি কলেজ প্রশাসনের সাথে কথা বলুন।‍‍`

শোভাবর্ধনের অজুহাত তুলে এসব গাছ কাটা হলেও কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর)  সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কলেজে জুড়ে বিভিন্ন স্থানে অর্ধবর্ষী বেশ কিছু গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।এর আগে সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে দিকে কলেজ নজরুল হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তিন থেকে চার শ্রমিক হলের মূল ফটকের সামনে লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা গোলচত্বরের ভেতরে প্রবেশ করে গাছ কাটেন। এর কয়েকদিন আগেই  কলেজের প্রাণী বিদ্যা ভবনের সামনে মেহগনি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

কলেজের গাছ কাটার একজন শ্রমিক বলেন, তারা ৫০০ টাকা দিন হাজিরা চুক্তিতে গাছ কাটার কাজ করছেন। পাশে বসা কয়েকজনকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ‍‍`ওনারা আমাদের ডেকে এনে কাজে লাগিয়েছেন। কতটা গাছ কাটতে হবে এখনো কিছু বলেননি।‍‍`

ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন বলেন, ‍‍`কয়েকদিন পর পর পরিষ্কার নামে প্রাচীন গাছগুলো কেটে পেলছে কলেজ প্রশাসন। কলেজে কোনো সংস্কার কাজ ছাড়াই এভাবে গাছ কাটছে কোনো এটা মানি বুঝছি না। কলেজের কি টাকা অভাব পড়ছে যে গাছ কেটে বিক্রি করে দিতে হবে।‍‍`

ভিক্টোরিয়া কলেজের কাজী নজরুল হলের তত্ত্ববোধক ও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মনির হোসেন বলেন, ‍‍`হলের সামনে গাছ কাটার সময় আমাকে জানানো হয়নি, বিষয়টি কলেজ প্রশাসনে বিষয়। আমি শুধু মাত্র হল পরিচালনা দায়িত্বে রয়েছি। তবে শুনছি  ক্যাম্পাস পরিষ্কার জন্য এ গাছ কাটা হয়েছে।‍‍`

গাছ কাটা তদারক করছিলেন কলেজের কয়েকজন কর্মচারী। তারা বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশেই তারা শ্রমিক লাগিয়ে গাছ কাটছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের সাত-আটজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, খোঁড়া অজুহাতে এসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব গাছের দাম প্রায় লাখ টাকা।গাছ কেটে পরিষ্কারের নামে পুরো কলেজের সৌন্দর্যবর্ধন নষ্ট করছেন কর্তৃপক্ষ।অথচ এ নিয়ে কথা বলে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখায় এক শিক্ষক।

 কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী সায়েম বলেন, গাছগুলো কাটা সঠিক হয়নি। কোনো সংস্কার কাজ ছাড়া এভাবে গাছ কাটার দরকার কি?

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, ‍‍`কলেজের ছাত্র হলের সামনে একটা গাছ ছিল। এটা পরিষ্কারে জন্য কাটা হয়েছে, প্রাণীবিদ্যা ভবনের সামনে গাছগুলো তো আগেই কাটা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের সাথে আম গাছ গুলো আমরা কাটিনি। কেউ বা কারা কাটছে, আমার জানা নেই। এ বিষয়ে পরে কথা বলো। কলেজে একদিন এসো।‍‍`

কুমিল্লা  বিভাগীয় বন কর্মকর্তা  মোহাম্মদ আলী বলেন, ‍‍`সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের গাছ অপসারণের প্রয়োজন হলে তা প্রথমে বন বিভাগকে লিখিত ভাবে জানাতে হয়। বন বিভাগ কাটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা জানতে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।‍‍`

 কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‍‍`সরকারি কলেজের গাছ কাটতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর কথা। কিন্তু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রশাসন বিষয়টি অধিদপ্তরকে জানায়নি।‍‍`

 

এসএএস

আর্কাইভ