• ঢাকা শুক্রবার
    ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুখোমুখি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ০৫:১০ পিএম

মুখোমুখি

সিটি নিউজ ডেস্ক

মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী

 

‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থি’ --
মৃদুলা গড়গড় করে ‘শেষের কবিতা’ বলে যাচ্ছিল।

মৈনাকের মুখে আলোর ঝলকানি , অল্প একটু হাসির ছোঁয়া। অনেক দিন পর মৈনাক আর  মৃদুলা এক সঙ্গে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দর্শন করছে। ওরা ঠিক করেছে কোথাও একটু বসবে তারপর আবার যে যার আস্তানায় ফিরে যাবে ।

মেঘ , পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ এই উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয় । এখানে হাত বাড়ালেই মেঘের স্পর্শ। ঝর্ণার মৃদু সংগীতে কত না বলা কবিতা শোনা যায়। মৃদুলা মৈনাক এক ব্রাঞ্চে প্রায় এক বছর হলো এক সঙ্গে কাজ করছে। দুজনে প্রায় সমবয়সী। 
বহুবার মৈনাককে এড়িয়ে গেছে মৃদুলা নানাভাবে ওকে বোঝাতে চেয়েছে জীবনটা ছেলেখেলা নয়। আসলে মৃদুলার চ্যালেঞ্জটা একটু অন্য রকমের। কাউকে সে সেখানে জড়াতে চায় না। তবুও মৈনাকের এক জেদ --‘কেন, নয় কেন ! ’

মিল্কশেকে চুমুক দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিল মৃদুলা।  মৈনাককে আজ সবকিছু খুলে বলবে সে , ওরা দুজনে মুখোমুখি বসে। এমনিতে মৈনাক বেশি কথা বলে কিন্তু আজ যেন উল্টো। 
---‘ আজ তোমাকে আমার ছোট বেলার কথা বলব।’
--‘ হু , বলো ’ 
-- ‘নিউ আলিপুরের এক নার্সিংহোমে আমার জন্ম । আমার চার বছর বয়সে মা লক্ষ্য করেন আমি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছি। অনেকটা সময় বিছানা আঁকড়ে থাকছি। কেমন যেন দুর্বল দুর্বল ভাব। তারপর একদিন মাথা ঘুরে পড়ে যাই।  ডাক্তারের নির্দেশ মতো নানা টেস্ট করে জানা যায় আমি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ কয়েক মাস আমার স্কুল বন্ধ হলো তবে ছবি আঁকা , পড়াশুনো , গান সব কিছুই মার কাছ থেকে শিখতে থাকলাম।’
মৈনাক অপলক দৃষ্টিতে মৃদুলার দিকে তাকিয়ে রইল

--‘ কয়েক বছর পর বোন এলো । ডাক্তারের নির্দেশেই তার পৃথিবীতে আসা। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন  দ্বিতীয় সন্তান সুস্থ হয়ে পৃথিবীতে এলে আমার এনগ্র্যাফ্ট করবেন ।’
মৈনাক প্রশ্ন করে ,
-  ‘ এনগ্র্যাফ্ট মানে ?’
-- ‘যাকে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলে। 
মা প্রেগনেন্ট হলে নানা পরীক্ষা করা হয়। জানা যায়, গর্ভের সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ। পরিবারের সবার চোখে তখন আশার আলোর ঝিলিক কিন্তু কোনো কারণে কোথাও কোনো ভুল থেকে গিয়েছিল। আমার বোনও থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। মার সব ইচ্ছা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তবুও লড়াইয়ে মা থেমে যেতে শেখেনি কখনও। পাঁচটা স্বাভাবিক সুস্থ মেয়েদের মতো মা আমাদের মানুষ করেছেন। সংগ্রাম করতে শিখিয়েছেন।  আমরা দুই বোন লেখাপড়ায় জোর দিই, ভালো রেজাল্ট করি , বোন ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায় আর আমার ব্যাপারে তোমার তো অনেকটাই জানা। ’

মৈনাক কল্পনা করতে পারে নি  আজ তাকে এসব শুনতে হবে । মৃদুলা আবার শুরু করে ,
-- ‘ তুমি তো তোমার মা বাবার একটি মাত্র সন্তান। জানি কিছু নিয়ম মেনে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা বিয়ে করতে পারে কিন্তু আমি তা চাই না। বলো , আমি কি কিছু ভুল ভেবেছি ? আমাদের প্রেমকে আটপৌরে হিসেবে আবদ্ধ নাই বা রাখলাম ’

হাজার চিন্তার সমুদ্রে ক্রমাগত ডুবতে থাকে মৈনাক। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় মৃদুলার।

-- ‘কি হলো মৈনাক ! এই খেজুর-কফি মিল্কশেক তোমার তো খুব পছন্দের সে জন্যই তো অর্ডার করেছি , নিচ্ছো না যে !’

ধীরে ধীরে গ্লাসটা মুখের কাছে তুলে নেয় মৈনাক ।

আর্কাইভ