
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ১০:২১ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক ব্যতিক্রমধর্মী `আন্তঃধর্মীয়’ প্রার্থনা সভায় অংশ নিয়েছেন, যেখানে তাকে ঘিরে উপস্থিত ধর্মীয় নেতারা তার জন্য ‘স্বর্গীয় স্বপ্ন ও ঐশ্বরিক সুরক্ষা’র প্রার্থনা করেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, খ্রিষ্টান, ইহুদি, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা একসঙ্গে ‘অ্যামেজিং গ্রেস’ গানটি গাইবার পর, ট্রাম্প ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন’ গঠনে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এই ৯০ মিনিটের আয়োজনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আমেরিকায় ধর্ম ফিরিয়ে আনছি—`শিগগির ও জোরালোভবে।’
২০২৪ সালের এক হত্যাচেষ্টার পর থেকে ট্রাম্প নিজেকে ‘ঈশ্বরের হাতে রক্ষা পাওয়া’ ব্যক্তি বলে দাবি করে আসছেন।
‘আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণে ট্রাম্প’
ট্রাম্পের আত্মিক উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউসে সদ্য গঠিত ফেইথ অফিসের প্রধান টেলিভ্যাঞ্জেলিস্ট পলা হোয়াইট বলেন, ‘ঈশ্বর তাকে ঘিরে রাখুন অলৌকিক সুরক্ষায়।’ তিনি বলেন, ‘তাকে মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধ্বের প্রজ্ঞা দিন, স্বর্গীয় স্বপ্ন দিন, দিব্যদৃষ্টি দিন।’
অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটু গেড়ে ট্রাম্পের উদ্দেশে প্রার্থনায় মগ্ন হন, অনেকে হাত উঁচিয়ে গানে অংশ নেন।
যদিও ট্রাম্পের জীবনে ধর্মের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নের মুখে থেকেছে—বহু বিবাহ, যৌন কেলেঙ্কারি, এবং ফৌজদারি দণ্ডের পটভূমিতে তিনি সম্প্রতি ট্রাম্প-লোগোযুক্ত ৬০ ডলারের বাইবেলও বিক্রি করেছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে যেমনটা ২০১৬ সালেও হয়েছিল, ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানরা ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে।
ধর্ম বনাম রাষ্ট্রের বিভাজন? ভুলে যাও’
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা বলে ধর্ম আর রাষ্ট্র আলাদা থাকা উচিত। আমি বলেছি—ঠিক আছে, সেটা ভুলে যাও। তোমরা হোয়াইট হাউসে এসেছ, এটা তোমাদের প্রাপ্য।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার প্রশাসন ‘ধর্মহীনতা বিরোধী’ একটি টাস্কফোর্সও গঠন করেছে, এবং ধর্মীয় দপ্তর চালু করেছে—যার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় উপস্থিতি আবার জোরদার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর আমেরিকার প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছেন, কারণ তিনিই এমন এক প্রশাসন গঠন করেছেন, যা আপনাদের আবার গর্বিত করবে।’ তিনি ঘোষণা করেন, তিনি একটি ‘অ্যান্টি-ক্রিশ্চিয়ান বায়াস’ টাস্কফোর্স গঠন করছেন।
মুসলিম ভোটারদের ধন্যবাদ, আর... ‘৩৮ কুমারী’?
২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুসলিম ভোটারদের সমর্থন পাওয়ায় ট্রাম্প তাদের ধন্যবাদ জানান। তবে একপর্যায়ে তিনি চলে যান বিতর্কিত প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষয় বন্ধের প্রতিশ্রুতিতে বহু মুসলিম ভোট পেয়েছেন।
এরপর তিনি মিশিগানের আরব-মার্কিন নেতাদের সঙ্গে কথোপকথনের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি ‘৭২ হুর’ সংক্রান্ত এক তত্ত্বকে বিদ্রুপ করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মিশিগানে কিছু ইমামের সঙ্গে দেখা করছিলাম। বললাম, `আপনারা মরতে চান?` তারা বললেন, `আমরা মরতে চাই না।` আমি বললাম, `৩৮ কুমারীর কী হবে?` উনারা বললেন, `ওসব বাজে কথা।`
অনুপস্থিত উপদেষ্টা, ‘ড. ফিল’-এর উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে একে একে মঞ্চে ডাকা হয় বিভিন্ন অতিথিকে—টিভি হোস্ট ‘ড. ফিল’, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ট্রাম্পপন্থী নেতাদের। তবে চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, যাকে ঘিরে ‘সিগনালগেট’ কেলেঙ্কারির পর ট্রাম্প এক ঘণ্টার মাথায় বরখাস্তের ঘোষণা দেন।